কিছু না করেও কিভাবে গুনাহ বেড়ে চলেছে?
একেবারেই কিছু করেননি তা নয়, কিছু একটা নিশ্চয় করেছেন, বিশ্রামরত হওয়ার আগে ইউটিউব থেকে কোনো গান বা নাটকের মজার কোন দৃশ্য বা সিনেমা'র কোনো আকর্ষণীয় অংশ আপনার এতই ভাল লেগে গেছে যে ফেসবুকের বন্ধুদের সাথে তা শেয়ার না করে পারেননি! ব্যস! আপনি কিন্তু গুনাহের অটোমেশন সুইচ অন করে দিলেন! আগামী যতদিন আপনার একেক জন বন্ধু এবং ঐ শেয়ার থেকে অন্যান্যরা যাদেরকে আপনি চেনেনওনা এটা দেখতে থাকবে তত দিন আপনার আমলনামায়ও তাদের সকলের পাপের একটা অংশ লিপিবদ্ধ হতে থাকবে। হাদীসের পরিভাষায় যাকে বলা হয় গুনাহে জারিয়া।
গুনাহে জারিয়া কি?
আমরা সবাই সদকায়ে জারিয়ার কথা জানি। অর্থাৎ কেউ কোন ভাল কাজ চালু করলে তা থেকে যতদিন মানুষ উপকৃত হবে ততদিন তার আমলনামায় নেকী লিখা হতে থাকবে।
অন্যদিকে গুনাহে জারিয়া হচ্ছে ঠিক এর বিপরীত, কেউ যদি কাউকে খারাপ কোনো শিক্ষা দেয় যেমন নাচ/গান, ফাঁকি ইত্যাদি অথবা বদ আমল হয় এরকম কোনো কিছু যেমন নাটক/সিরিয়াল, সিনেমা, অশালীন ভিডিও ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে শেয়ার করে, তাহলে এসব কিছু থেকে অন্যরা যতদিন আমল করবে ততদিন গুনাহের একটা অংশ শিক্ষা দেয়া বা শেয়ারকারী ব্যক্তির আমলনামায়ও লিখা হতে থাকবে। এটাকেই গুনাহে জারিয়া বলা হয়। এ বিষয়ে নীচের হাদীসটি লক্ষনীয়।
হাদিসের মানঃ সহিহ
আবু দাউদ ৪৬০৯, মুসলিম, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, আহমাদ
Online sources: hadithbd.com
ফেসবুক শেয়ার থেকে গুনাহে জারিয়া যে কারণে ভয়াবহ
ভাবুন শারীরিক দুনিয়া'য় (রিয়েল ওয়ার্ল্ডে) কাউকে কোন খারাপ কিছু শেখালেন, আমলটি সে একা করলো অথবা হাতে গোনা কয়েকজনকে শিক্ষা দিলো, তারমানে আপনি ভাগিদার হচ্ছেন মাত্র ৩/৪ জন ব্যক্তির গুনাহে'র, কিন্তু ইন্টারনেট দুনিয়া'য় (ভার্চুয়াল ওয়ার্ল্ডে) আপনি একটি গান, নাটক বা সিনেমা শেয়ার করলেন আর মুহুর্তের মধ্যে তা ১ থকে ১০০ জন, ১০০ জন থেকে আরো ১০০০ জনের নিকট এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে আরো বেশি ব্যক্তি বর্গের নিকট পৌঁছে গেল আর তারা তা থেকে বদ আমলে লিপ্ত হলো, সেক্ষেত্রে আপনি ভাগিদার হচ্ছেন শত শত থেকে হাজার হাজার মানুষের গুনাহে'র!
কি করে বাঁচবেন এরকম গুনাহে জারিয়া থেকে?
শেয়ার বাটনে ক্লিক দেয়ার আগে একটু ভেবে নিন, এ থেকে আপনি উপকৃত হবেন না ক্ষতিগ্রস্ত? |
নিশ্চয় এ প্রশ্নের উত্তর সবার জানা যে, খারাপ কিছু শেয়ার না করলেই বেঁচে যাবেন ইনশা'আল্লাহ, তবুও আরো কয়েকটি বিষয় নিজেকে একটু রিমাইন্ড করিয়ে নিন।
- কাউকে খারাপ আমল শেখানো থেকে আল্লাহ তায়ালা'র ভয়ে বিরত থাকুন।
- বিশেষভাবে যতই মজা পেয়ে থাকুন বা ভাল লেগে থাকুক সিনেমা, নাটক, গান শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন।
- কিছু অভিনয় অনভিজ্ঞ বেপর্দা নারী-পুরুষের সমন্বয়ে নির্মিত শিক্ষামূলক সদৃশ নাটিকা শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন।
- যত গুরুত্বপূর্ণ খবরই হোক বেপর্দা মহিলা সংবাদ পাঠিকা পরিবেশিত খবর শেয়ার করা থেকে বিরত থাকুন। সংবাদ শেয়ার করা যদি খুব দরকার হয়েই যায় কষ্ট হলেও একটু খুঁজে নিয়ে পুরুষ সংবাদ পাঠক পরিবেশিত সংবাদ শেয়ার করুন।
- শেয়ার বাটনে ক্লিক দেয়ার আগে একটু ভেবে নিন, এই শেয়ার থেকে আপনি উপকৃত হবেন না ক্ষতিগ্রস্ত?
- ইচ্ছায় অনিচ্ছায় অশ্লীলতার প্রচার ও প্রসার করা থেকে বিরত থাকুন, নিজেকে আল্লাহ তায়ালা'র ক্রোধ থেকে নিরাপদে রাখুন, আল্লাহ তায়ালা কাউকে শাস্তি দিতে চাইলে কেউ'ই তাকে রক্ষা করতে সক্ষম হবে না। আল্লাহ তায়ালা বলেন, "যারা মুমিন'দের মাঝে অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে, তাদের জন্যে রয়েছে দুনিয়ার ও আখিরাতের মর্মন্তুদ শাস্তি" (সূরা নূর ১৯)। লক্ষ্য করুন শাস্তি শুধু পরকালেই নয় বরং অশ্লীলতার প্রচারকারীদের জন্যে দুনিয়াতেও শাস্তি প্রেরণ করার কথা বলা হচ্ছে। দুনিয়ার শাস্তি মানে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বড় কোনো অসুখ বা বিপদে পড়ে যাওয়া! কেন শুধু শুধু নিজের জন্যে এরকম বিপদ ডেকে আনবেন?
- কৌশল অবলম্বন করুন, কিছু শেয়ার না করলেও যখন চলে না, খারাপ বা বদ আমল শেয়ার না করে ভাল কিছু শেয়ার করে দিন উল্টো নেকী'র খাতা অটোমেশন হয়ে যাবে ইনশা'আল্লাহ। আল্লাহ তায়ালা বলেছেন, "আর যে ভাল কথাগুলো'কে সত্য বলে মেনে নিয়েছে, অতপর আমি তার আরামের জন্যে পথ চলা সহজ করে দিবো" (সূরা লাইল ৬-৭)। সুতরাং এরকম শেয়ার করুন যেন আল্লাহ তায়ালা আপনার পথ চলা সহজ করে দেন!
- গুনাহের আমল করেও শুধু শেয়ার না করার জন্যে গুনাহ মাফে'র আল্লাহ তায়ালা যে সুযোগটি দিয়ে রেখেছেন তা গ্রহণ করতে সচেষ্ট হোন! নিজে কোন নাটক/গান/সিনেমা দেখে ফেললেও তা ফেসবুক বা নিকটবর্তী সঙ্গীর সাথে শেয়ার বা আলোচনা করা থেকে বিরত থাকুন, হয়তো আল্লাহ তায়ালা আপনার গুনাহটি ক্ষমা করে দিবেন! এই হাদীসটির ভাষ্য বোঝার চেষ্টা করুন। হযরত আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, "আমার প্রত্যেক উম্মতের গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। তবে যে প্রকাশ্যে গুনাহ করে অথবা গুনাহ করে তা বলে (শেয়ার করে) বেড়ায়, তার গুনাহ মাফ করা হবে না । কোন ব্যক্তি রাতে গুনাহ করলো আর আল্লাহ তায়ালা তা গোপন রাখলেন, কিন্তু ভোর বেলায় লোকটি নিজেই তা প্রকাশ করে দিলো! বললো হে অমুক! গত রাতে আমি এই এই কাজ করেছি! আল্লাহ তায়ালা যা গোপন রেখেছিলেন সকালে সে নিজেই তা প্রকাশ করে দিল!" (সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ২৯২২) । হাদীসটিতে এটা স্পষ্ট বোঝা যায় যে, কোন বদ আমল করেও গোপন রাখতে পারলে সহজেই ক্ষমা পাওয়া যেতে পারে, অন্যদিকে শুধু শেয়ার করে দেয়ার জন্যে ক্ষমা পাওয়াও কঠিন হয়ে যাবে আবার শত শত মানুষের গুনাহের ভাগও নিতে হবে।
বি:দ্র: এই লিখাটির উদ্দেশ্য শুধুমাত্র ব্যক্তি সচেতনতা তৈরি করা, আমরা যেন অজ্ঞতা থেকে নিজেরাই নিজেদের বিপদের কারণ না হয়ে যায়। কারো মনে কষ্ট বা আঘাত দেয়ার জন্যে নয়। ।