আমরা অজ্ঞতা বশত: প্রায়শই বলে থাকি এখন ‘সময়’ খুব খারাপ! অথচ এরকম বলা ঠিক নয়। কারণ আল্লাহ তায়ালা’ই হচ্ছেন সময়। সময়কে খারাপ বলা আর আল্লাহ তায়ালাকে খারাপ বলা একই কথা। হাদীসে কুদসীতে
আছে, “আল্লাহ তায়ালা বলেন, বনি আদম আমাকে কষ্ট দেয়, সে যুগ (সময়) -কে গালি দেয়
অথচ আমিই যুগ (সময়) আমিই রাত ও দিন পরিবর্তন করি”।
_________বুখারী ৪৮২৬, মুসলিম ২২৪৬,১৩৯
সহিহ হাদীসে কুদসী ১৩৯, আবূ দাঊদ ৫২৭৪,
আহমাদ ৭২৪৫, মিশকাতুল মাসাবীহ ২২
আহমাদ ৭২৪৫, মিশকাতুল মাসাবীহ ২২
তাহলে রসুলুল্লাহ (সা:) যে বলেছেন প্রত্যেক যুগ তার পূর্ববর্তী যুগ থেকে খারাপ হবে?
আনাস ইবনে মালিক (রাঃ)-এর নিকট হাজ্জাজ কর্তৃক মানুষ যে জ্বালাতন ভোগ করছে সে
সম্পর্কে অভিযোগ পেশ করা হলে তিনি বললেন, ধৈর্য ধর। কেননা, মহান প্রতিপালকের সাথে
মিলিত হবার পূর্ব পর্যন্ত (অর্থাৎ মৃত্যুর পূর্বে) তোমাদের উপর এমন কোন যুগ অতীত হবে না, যার পরের যুগ তার চেয়েও বেশী খারাপ নয়। তিনি বলেন, এ কথাটি আমি তোমাদের নবী (সা:) থেকে শুনেছি।
______ সহিহ বুখারী হাদিস নং ৭০৬৮
আ:প্র :৬৫৭৫, ই: ফা: ৬৫৮৮ ।
এখন প্রশ্ন হতে পারে নবী (সা:) নিজেই কি যুগকে খারাপ বললেন? কখনো
নয়। তিনি খারাপ বলেছেন ‘সময়ের ব্যবধানে মানুষের অভ্যাস, আচরণ ও বস্তুগত পরিবর্তন‘কে যুগকে নয়। তার প্রমাণ স্বরুপ আরকেটি হাদীস লক্ষ্য করা যেতে পারে। নবী (সা:)
বলেছেন, “আমার যুগের লোকেরাই তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম। অতঃপর তাদের নিকটবর্তী
যুগের লোকেরা, অতঃপর তাদের নিকটবর্তী যুগের লোকেরা” (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ২৬৫১)। হাদীসটিতে স্পষ্টতই উল্লেখিত, সময়ের ব্যবধানে মানুষের আচরণগত পরিবর্তন হতে থাকবে এবং পর্যায় ক্রমিকভাবে তারা অনুত্তম হতে থাকবে। এখানে সময়ের কোন দোষ হয়নি, বরং তখনও যেরকম ‘সকাল’ ‘দুপুর’
‘রাত’ হতো এখনও সেরকম ‘সকাল’, ‘দুপুর’ ‘রাত’ হয়। সময় যে খারাপ নয় বা তার কোন
পরিবর্তন হয়নি তার আরেকটি প্রমাণ দেখুন।
নবী (সা:) বলেন, “আল্লাহ যেদিন আসমান যমীন সৃষ্টি করেন সেদিন যেভাবে যামানা ছিল তা আজও তেমনি আছে। বারমাসে এক বছর, তার মধ্যে চার মাস পবিত্র। যার তিন মাস ধারাবাহিক যথা যিলকাদ,
যিলহাজ্জ ও মুহাররম আর মুযার গোত্রের রজব যা জামাদিউস সানী ও শাবান মাসের
মধ্যবর্তী” (সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৪৬৬২ আ.প্র. ৪৩০১, ই.ফা. ৪৩০২)।
যুগ, সময় ও যামানা শব্দগুলোর মধ্যে পার্থক্য কি?
যুগ, সময় এবং যামানা সমার্থক শব্দ। যুগ ও যামানা শব্দ দিয়ে সময়ের সমষ্টিকে বোঝানো হয়ে থাকে যেমন ১২
বছর সময় কাল’কে আমরা যুগ/যামানা বলে থাকি। সৃষ্টির শুরুতে যেরকম সকাল, দুপুর, রাত হতো হাজার হাজার বছর পর এখনও সেরুপই
সকাল, দুপুর, রাত হয়। আবার সৃষ্টির শুরুতে যেভাবে মানুষের জীবনে, হাসি-কান্না, ক্ষুধা, তন্দ্রা,
নিদ্রা ও অন্যান্য প্রয়োজনবোধ ছিলো হাজার হাজার বছর পর তাও আজ একই রুপ বিদ্যমান
আছে ।
অপরদিকে সময়ের বিবর্তনে মানুষের প্রয়োজন পূরণের ক্ষেত্রে আরচণ, জীবন ধারণ পদ্ধতি ও
বস্তুগত যে পরিবর্তন হয় সেটাই এক সময় খারাপ বা অনুত্তম বলে বিবেচিত হয়।
উদাহরণ স্বরুপ, শুরুতে মানুষ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যেত পায়ে হেঁটে, তারপর
একসময় তারা শিখল কি করে পশু পোষ মানাতে হয়, তখন থেকে পথ অতিক্রম করা শুরু হলো
পশুর পিঠে চড়ে, তারপর অনেক সময়ের ব্যবধানে আবার তারা শিখল কি করে চাকা বানাতে হয়,
তখন থেকে পথ চলা শুরু হলো চাকায় ভর দিয়ে।
লক্ষ্য করুন এখানে যা পরিবর্তন হয়নি তা হচ্ছে সকাল, দুপুর ও রাতের আবর্তন এবং এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যাওয়ার
প্রয়োজনীয়তা, আর যা পরিবর্তন হয়েছে তা হলো পথ অতিক্রম করার পদ্ধতি।
এরকম অনেক উদাহরণ দেয়া যেতে পারে, আগের যামানায় মানুষ দাঁত মাজতো আঙ্গুল দিয়ে,
তারপর গাছের ডাল দিয়ে আর এখন দাঁত মাজে টুথব্রাশ আর পেষ্ট দিয়ে, এখানে দাঁত মাজার প্রয়োজনীয়তা অনেক যুগ (সময়) অতিক্রম হলেও একই রুপ
আছে এবং থাকবে, পরিবর্তন হয়েছে শুধু বস্তুগত ও অভ্যাসের। এটাই হাদীসে বলা হয়েছে প্রত্যেক যামানা তার পূর্ববর্তী যামানা থেকে খারাপ
হবে। আমরা নিজেরাই দেখতে পাচ্ছি এই হাদীসের সুস্পষ্ট বাস্তবতা ৮০’র দশকে আমাদের
সমাজ ব্যবস্থা কতটা শ্লীলতা পূর্ণ ছিল আর আজ কেবল টিভি এবং ইন্টারনেট মিডিয়ার
সুত্র ধরে তা কতটা অশ্লীলতা পূর্ণ অবস্থায় উপনীত হয়েছে।
সুতরাং ‘সময়’ খারাপ হয় না, খারাপ হয় মানুষ, যখন তার আচরণ ও জীবন ধারণ পদ্ধতি থেকে
আল্লাহ ভীতি, ভাল-মন্দ ও হালাল হারামের জ্ঞান লুপ্ত হতে থাকে।