Sunday, June 14, 2020

রসুলুল্লাহ (সা:) যখন বললেন, ‘সংক্রামক রোগ বলে কিছু নেই’, তখন এক বেদুঈন বললো, ইয়া রসুলুল্লাহ (সা:) মরুভূমিতে আমার সুস্থ-সবল উটের পালের মধ্যে কখনো কখনো চর্মরোগে আক্রান্ত উট এসে আমার সুস্থ উটগুলোকেও চর্মরোগী (মনে হয় সংক্রমিত করে দিল) বানিয়ে দেয়। তখন রসুলুল্লাহ (সা:) তাকে পাল্টা প্রশ্ন করলেন, ‘প্রথম উটটির রোগ সৃষ্টি করলো কে?’ (মুসলিম ৫৬৮১ থেকে ৫৬৯৯, আবূ দাউদ ৩৯১১, সহীহ বুখারী [তাওহীদ] ৫৭৭৬)

সম্মানিত পাঠক আপনার জানা আছে এই প্রশ্নের উত্তর? তাঁকে (সা:) ভুল বোঝার কোন অবকাশ নেই। বরং তিনিই (সা:) বলে দিয়েছেন রোগাক্রান্ত শুরু হয়ে গেলে কিভাবে সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে। ‘আক্রান্ত ও সুস্থ উটকে যেন একসাথে পানি পান করানো না হয়, সুস্থ ব্যক্তি যেন আক্রান্ত এলাকায় না যায়, আক্রান্ত এলাকার মানুষ যেন সুস্থ এলাকায় প্রবেশ না করে (অর্থা‌ৎ লকডাউন করে দেয়া হয়)’ এগুলো তাঁরই (সা:) দেখানো পথ (সহীহ বুখারী (তা:) ৫৭২৮) । এটা হলো তাকদীর। রসূলুল্লাহ (সা:) প্লেগ সম্বন্ধে বলেছেন ‌‍‍‍‍‌‌“এটি একটি আযাব। আল্লাহ তায়ালা যাঁর প্রতি ইচ্ছা তা প্রেরন করেন। আর মুমিন বান্দাগনের জন্যে তা (আযাবের চেহারায়) রহমত স্বরূপ। আল্লাহ তায়ালা তাকদীরে যা লিপিবদ্ধ করেছেন তা’ই হবে, অন্তরে এই সুদৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে কেউ প্লেগাক্রান্ত স্থানে ধৈর্য ধারণ করলে সে শহীদী মর্যাদা লাভ করবে” (বুখারী ৩২২৮ ই:ফা:, ৬৯৭৪)। একবার উমার (রা:) সিরিয়া সফরে বের হওয়ার পর পথিমধ্যে তাকে জানানো হলো যে সিরিয়ায় প্লেগ ছড়িয়ে পড়েছে তিনি যেন সেখানে না যান। উমার (রা:) ফিরে গিয়েছিলেন ঠিকই, কিন্তু তিনি বলেছিলেন, ‘‘জেনে রাখ, ফিরে আসায় আমার মৃত্যু বিলম্বিত হবে না। আর সেখানে যাওয়াতে আমার মৃত্যু ত্বরান্বিতও হতো না” (বুখারী ৫৭৩০, মুসলিম ৫৬৭৭, মুসনাদে আহমাদ ১২০)। ‘সংক্রমণ বলে কিছু নেই’ বলতে আসলে একজন মুসলমানকে তাকদীরের উপর সুদৃঢ় বিশ্বাসী হতে বলা হয়েছে।

সংক্রামক রোগ বলে কিছু নেই তাহলে রোগ সংক্রমিত হয় কেন


সংক্রমণ সদৃশ রোগগুলো আসে একটা মিশনের মতো। কাদেরকে এটা আক্রান্ত করবে তার সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে। হাদীসে উল্লেখিত (বুখারী ৩২২৮ ই:ফা:) ‘যার প্রতি ইচ্ছা’ কথাটির উদাহরণস্বরুপ বলা যায়, আল্লাহ তায়ালা লূত (আ:) এর কওমের প্রতি যে পাথর নিক্ষেপ করেছিলেন তার প্রতিটি পাথরে সুনির্দিষ্ট ব্যক্তির নাম লিখা ছিল। যে পাথরে যে ব্যক্তির নাম লিখা ছিল ঐ পাথর ঐ ব্যক্তির উপরই বর্ষিত হচ্ছিল, ঐ সময় যারা জনপদের বাইরে অন্য শহর বা গ্রামে ছিল, হয়তো কারো সাথে দাঁড়িয়ে কথা বলছিলো সেখানেই আকাশ থেকে (তার নাম লেখা)পাথর নিক্ষিপ্ত করে তাকে ধ্বংস করে দেয়া হয়! পাথরগুলো কিন্তু নির্দোষ কোন মানুষকে আঘাত করেনি!

তথ্যসুত্র: তাফসীর ইবনে কাসীর দ্বাদশ খন্ড সুরা হুদ ৮২-৮৩, আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া ১ম খন্ড

আল্লাহ তায়ালা সূরা হুদের ৮২-৮৩ নং আয়াতে এ বিষয়ে উল্লেখ করেছেন;

অত:পর যখন আমার (গযবের) হুকুম এলো, তখন আমি সেই জনপদগুলো উল্টিয়ে দিলাম এবং তার উপর ক্রমাগত পাকা মাটির পাথর নিক্ষেপ করতে শুরু করলাম। এগুলো (পাথরগুলো) তোমার মালিকের নিকট (অপরাধীদের নামসহ) চিহ্নিত ছিলো। আর সে (গযবের) স্থানটি তো যালেমদের কাছ থেকে দূরেও নয়!

সূরা হুদ ৮২-৮৩

এটা কি কুরআনে আছে ‘সংক্রামক রোগ’ রোগ বলে কিছু নেই?

কথাটি সরাসরি কুরআনে নেই তবে উপরোক্ত এবং এ সংক্রান্ত প্রায় সবগুলো হাদীসই সহিহ আর আল্লাহ তায়ালা সূরা নাজমের ৩-৫ নং আয়াতে বলে দিয়েছেন, “তিনি (মুহাম্মাদ) নিজ প্রবৃত্তি থেকে কিছু বলেন না, বরং তা হচ্ছে ওহী যা তার কাছে পাঠানো হয়, একজন এটা তাকে শিখিয়ে দিয়েছে, সে প্রবল শক্তির অধিকারী [জীবরাঈল (আ:)]”। সুতরাং নির্দ্বিধায় বলা যায় এটা আল্লাহ তায়ালারই কথা। তাছাড়া ‘‘…..আর আমি যাকে চাইলাম ছাড় দিলাম, আর না ফরমান জাতির উপর থেকে আমার আযাব কখনোই রোধ করা যাবেনা” (সূরা রাদ ১১০), আল্লাহ তায়ালা’র এই কথার দৃষ্টিকোণ থেকেও ‘সংক্রমণ’ কথাটি অর্থহীন! এটা শুধুই তাঁর ইচ্ছাধীন তিনি কাকে ছাড়বেন আর কাকে ধরবেন।

যে কারণে শাস্তিগুলো প্রেরণ করা হয়ে থাকে

সংক্রমণ সদৃশ রোগগুলো এবং যেকোন বিপদ আসে পরীক্ষা স্বরুপ অথবা পাপে নিমজ্জিত, ভাল মন্দের জ্ঞান বিস্মৃত মানুষদেরকে হয় শাস্তি দানের জন্যে অথবা তাদেরকে নিজ রবের আনুগত্যের দিকে ফিরিয়ে আনার জন্যে। “বড় শাস্তির পূর্বে তিনি ছোট শাস্তি পাঠান যেন সবাই তাঁর দিকে ফিরে আসে” (সূরা সাজদা ২১) । আবার সূরা বাকারা’র ১৫৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে, “আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করবো, ভয়-ভীতি, ক্ষুধা-অনাহার, জান-মাল ও ফসলাদিরর ক্ষতি সাধন করে”। আল্লাহ তায়ালা মানুষের উপর জুলুমকারী নন বরং তাদের কাছে মন্দ যা কিছু পৌঁছায় তা তাদেরই সহস্তে উপার্জিত (কৃত কর্মের ফল)। আমাদের উপর যেসব বিপদ এসেছে এবং আসছে তার জন্যে আমরা নিজেরাই দায়ী, আজকে নব্য জাহিলিয়াতের যামানায় মানুষের অন্তর থেকে আল্লাহ ভীতি লুপ্ত প্রায়, তার জায়গায় অবস্থান করছে, অশ্লীলতা, লোভ, হিংসা-বিদ্বেষ, অহংকার যেসব দোষের জন্যে অতীতে আল্লাহ তায়ালা অনেক জনপদ ধ্বংস করে দিয়েছেন। আমাদের ভয় করা উচি‌ৎ, কৃতকর্মের জন্যে আমরা পর্যদুস্ত, বিপদগ্রস্ত না হয়ে পড়ি। আল্লাহ তায়ালা বলেন,

লোকালয়ের মানুষগুলো কি এতই নির্ভয় হয়ে গেছে, রাতে তাদের উপর আমার আযাব আসবে না? যখন তারা ঘুমে বিভোর থাকবে! অথবা জনপদের মানুষগুলো কি নির্ভয় হয়ে গেছে যে, আমার আযাব তাদের মধ্যে দিনে এসে পড়বে না- যখন তারা খেল তামাশায় মত্ত থাকবে কিংবা তারা কি আল্লাহ তায়ালার কৌশল থেকে নির্ভয় হয়ে গেছে, আসলে আল্লাহ তায়ালার কৌশল থেকে ক্ষতিগ্রস্ত জাতি ছাড়া অন্য কেউই নিশ্চিন্ত থাকতে পারেনা

সূরা আরাফ ৯৭-৯৯

চারিদিক কালো মেঘে ঢেকে গেলে রসুলুল্লাহ (সা:) এর চেহারা মুবারক মলিন হয়ে যেত এই চিন্তায়, না জানি এটা আমার উম্মতের জন্যে ধ্বংস নিয়ে আসছে! সাহাবীগণের (রা:) অনেকেই একথা বলতেন “আমার অসুখ তো আমার গুনাহ”

সুতরাং সংক্রমিত হওয়াকে ভয় নয়, ভয় করুন আল্লাহ তায়ালাকে। প্রথম সর্তকতা হিসাবে নিজের গুনাহসমূহের প্রতি লক্ষ্য করুন আর বিনীতভাবে তওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা’র সাথে নতি স্বীকার করুন। “আল্লাহ তায়ালা মানুষের প্রতি দু:খ-কষ্ট, বিপর্যয় আপতিত করেন যেন তারা বিনয়ের সাথে নতি স্বীকার করে” (সূরা আনয়াম ৪২)। আর যারা ভয় করে, বিশ্বাস করে আর আল্লাহ তায়ালার উপরই ভরসা করে ‘তাদেরকে বাঁচানোর দায়িত্ব’ আল্লাহ তায়ালা নিজেই নিয়েছেন’ (সূরা ইউনুস ১০৩, সূরা রুম ৪৭) !

Share: