Tuesday, July 21, 2020

মুসহাফ শব্দের অর্থ 'পানডুলিপি' বা 'লিখিত কোন কিছু'। শব্দটি আরবী 'সহিফা' শব্দ থেকে নিসৃত। 'সহিফা' শব্দটি পবিত্র কুরআনে উল্লেখিত 'সুহুফ' শব্দ থেকে নিসৃত, যা কুরআনে ৮ বার উল্লেখিত হয়েছে। যেমন সূরা আ'লা'র ১৯নং আয়াতে  صُحُفِ اِبۡرٰہِیۡمَ وَ مُوۡسٰی  (সহুফি ইব্র-হী-মা অ মু-সা)। কুরআনের বাংলা অনুবাদে শব্দটির অর্থ করা হয়েছে 'কিতাব' বা 'গ্রন্থ' অর্থাৎ 'যা ইব্রাহীম ও মুসা'র কিতাবেও আছে'।

হযরত আবু বকর (রা:) প্রথম বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে থাকা কুরআনের লিপি/আয়াতগুলোকে সন্নিবেশিত করে একটি পূর্ণাঙ্গ পানডুলিপি (মুসহাফ) তৈরি করান যাকে মুসহাফে সিদ্দিকী বলা হয় এব‌ং প্রথম 'মুসহাফ' শব্দটি ব্যবহার করা হয়।

মাসহাফ কাকে বলে


কুরআন ও মুসহাফের মধ্যে পার্থক্য কি?

কুরআন অর্থ 'পঠিত' বা যা 'পাঠ করা হয়েছে' বা 'যা পাঠ করা হয়'। জীবরাঈল (আ:) কর্তৃক মুহাম্মদ (সা:) এর নিকট আয়াত নাযিলের সময় যা পাঠ করা হয়েছিল এবং মুহাম্মদ (সা:) যা পাঠ করেছিলেন তা'ই হচ্ছে 'কুরআন'। পক্ষান্তরে জীবরাঈল (আ:) কর্তৃক যা পাঠ করা হয়েছিল এবং মুহাম্মদ (সা:) যা পাঠ করেছিলেন তার লিখিত অনুলিপি'ই হচ্ছে 'মুসহাফ' বা 'পানডুলিপি'। সব মুসহাফ ও কুরআনের আয়াতসমূহের অর্থ এক কিন্তু 'মুসহাফ' ৭ রকম হতে পারে কারণ কুরআন ৭ কিরাতে ( পড়ার ৭  নিয়মে) নাযিল করা হয়েছে। বর্তমানে দুটি সর্বাধিক প্রচলিত 'মুসহাফ' এর একটি হলো 'মদিনা মুসহাফ' যা আমাদের দেশে সৌদী আরব টাইপ হিসাবে পরিচিত এবং অপরটি 'মাজেদী মুসহাফ' যা 'ইন্দো-পাক' ও 'লক্ষ্ণৌ' টাইপ নামে বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশের দেশগুলোতে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

মদীনা ও উসমানী মুসহাফ কাকে বলে?

তৃতীয় খলিফা হযরত উসমান বিন আফ্ফান (রা:) এর আমলে সাহাবীগণ (রা:) বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে কুরআন পাঠের ৭ নিয়মের একেকজন একেক নিয়ম অনুযায়ী প্রচারণা শুরু করেন, যার ফলে কুরআন পাঠের সঠিক নিয়ম নিয়ে ব্যাপক বিভ্রান্তি তৈরি হয়। সেইসাথে আঞ্চলিক উচ্চারণের সাথে মিশে বিভিন্ন শব্দের উচ্চারণে পার্থক্য পরিলক্ষিত হয় এবং মুনাফিকগণ  মিথ্যা আয়াত কুরআনের সাথে মিশিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। অবস্থা দৃষ্টে হযরত উসমান (রা:) মূল কুরআন সংরক্ষণ করার তাগিদ অনুভব করেন এবং এই মর্মে তিনি অহী লেখক ও হাফেজ সাহাবাগণকে (রা:) সাথে নিয়ে মূল কুরআনের একটি অনুলিপি তৈরি করেন এবং পূর্বের সকল পানডুলিপি (মুসহাফ) পুড়িয়ে ফেলার নির্দেশ দেন। 

উসমান (রা:) কর্তৃক সংকলিত এই অনুলিপিকে'ই 'উসমানী মুসহাফ' বলা হয়ে থাকে। এই অনুলিপিতে যের, যাবার ও পেশ ছিল না, হিজরী ৭০০ সনের পর থেকে উচ্চারণে সহজতা আনয়নের জন্যে যের, যাবার ও পেশ সংযোজন করা হয়। বর্তমানে সৌদী আরবের কিং ফাহাদ গ্লোরিয়াস কুরআন প্রিন্টিং কমপ্লেক্স থেকে যে কুরআন প্রিন্ট করা হয় তা 'মদীনা মুসহাফ' নামে পরিচিত, যা 'উসমানী মুসহাফ' এর (পাঠ সহজ করার জন্যে) কিছু পরিবর্তিত সংষ্করণ। 



তথ্য সুত্র:
- Differences between Quran and Mushaf by www.quranicstudies.com





Share: