Monday, June 15, 2020

DNA (Deoxyribonucleic Acid) আল্লাহ তায়ালার সত্যতার এক বিস্ময়কর নির্দশন। নিদর্শনটি বোঝার আগে আমাদের জানা দরকার DNA কি এবং কুরআন ও হাদীস এ বিষয়ে কি বলে।

DNA কি?

DNA হচ্ছে এক ধরণের কোড যা মানুষ বা প্রাণীর শরীরের সেল (cell) -গুলোতে লিখিত থাকে।

DNA এর রাসায়নিক গঠন
DNA'র রাসায়নিক গঠন (বিস্তারিত দেখুন এই লিংকে)

শরীরের ভিতরে সংরক্ষিত এই কোড-ই মানুষের আচার-আচরণের জন্য দায়ী, সে কি করবে, কিসের প্রতি আগ্রহী হবে, তার চেহারা কেমন হবে সমস্ত কিছুই এই কোডের ভিতরে যেভাবে লিপিবদ্ধ আছে সে অনুযায়ী সংগঠিত হয়ে থাকে। একজন নবজাতকের DNA গঠিত হয় তার মাতা-পিতার DNA 'র হবুহু কপি থেকে। যার ফলে নবজাতকের চেহারা তার মাতা-পিতার মতোই হয় আবার তাদের শরীরে কোন রোগ থেকে থাকলে সেটাও কপি হয়ে যায়, এ ধরণের রোগকেই আমরা বংশানুক্রমিক রোগ বলে থাকি। শরীরের ভিতরে এই কোডগুলো খুবই সুক্ষ্ন ও সুবিন্যস্তভাবে লিপিবদ্ধ করা থাকে যার পরিমান অবাক হওয়ার মতো।

DNA কোডের পরিমাণ

DNA এর ভিতর সংরক্ষিত এই কোড যদি বই আকারে লিপিবদ্ধ করা হয় তাহলে বইটির উচ্চতা হবে প্রায় ৭০ মিটার! যা কিনা প্রায় ১৫ থেকে ২০ তলা উঁচু ভবনের সমান! কোন দ্রুততম টাইপিষ্ট যদি  মিনিটে ৬০টি করে শব্দ গড়ে প্রতিদিন ৮ ঘন্টা করে টাইপ করতে থাকে, তাহলে একজন মানুষের শরীরের সংরক্ষিত সম্পূর্ণ জেনেটিক কোড লিপিবদ্ধ করতে প্রায় ৫০ বছর সময় লাগবে!

DNA কোড সম্বন্ধে বিজ্ঞানীদের বক্তব্য

এই কোডগুলো মানুষের শরীরে এত সুন্দরভাবে সুবিন্যস্ত করা হয়েছে যে বিজ্ঞানীগণ একে 'বুদ্ধি বৃত্তিক ডিজাইন' হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির একজন নাস্তিক (সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী নয়) নৃতত্ত্ববিদ রিচার্ড ডকিনস জেনেটিক কোডের সুবিন্যস্ততা দেখে বলেছেন, 'DNA কোডের এরকম বুদ্ধি বৃত্তিক ডিজাইন কখনো একা একা হতে পারে না! এটা একজন সুদক্ষ ডিজাইনারের কাজ যার বা যাদের কাছে মানুষের চাইতে অনেক উন্নত টেকনলোজি আছে, আর যিনি পৃথিবীর কেউ নন, তিনি বা তারা হয়তো মহাশূণ্যের গভীর অন্ধকারের দিকে অবস্থানকারী কেউ, যিনি (যারা) আমাদের থেকে অনেক বেশি বুদ্ধি ও জ্ঞান সম্পন্ন! 

DNA'র বাহ্যিক আকৃতি

সম্মানিত পাঠক ভেবে দেখুন, সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসী নয় এরকম একজন মানুষ বলছেন আমাদের থেকে আরো বেশি জ্ঞান সম্পন্ন কেউ আছে! আমাদের জন্য কি এটুকুই যথেষ্ট নয় যে তারা আসলে পরোক্ষভাবে সৃষ্টিকর্তাকেই স্বীকার করছেন?  এছাড়াও তিনি আরো বলেন, মানুষ কোন এক দিন হয়তো জেনেটিক কোডের ভিতরেই সেই সুদক্ষ ডিজাইনারের সিগনেচার (সাইন, নিদর্শন) খুঁজে পাবে, কারণ একজন সুদক্ষ ডিজাইনার তার কাজের ভিতরে নিজের কোন চিহ্ন এঁকে দিবেন এটাই স্বাভাবিক! ঠিক, তারা স্বীকার করুন আর না করুন আল্লাহ তায়ালা ঠিকই বিভিন্নভাবে মানুষের ভিতরে বাইরে এই সিগনেচার রেখে দিয়েছেন। যেমন মানুষের হার্টের আকৃতি আরবী আল্লাহ শব্দটির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, যে হাত দিয়ে মানুষ সিগনেচার করে সেই হাতেরই  ৫ আঙ্গুলে আরবী আল্লাহ লিখা আছে! তার মানে আল্লাহ তায়ালা ঠিকই সিগনেচার দিয়ে রেখেছেন!

কুরআন ও হাদীসে কিভাবে DNA'র উল্লেখ আছে?

মানুষের শরীরের মধ্যে যে আল্লাহ তায়ালা নিদর্শন রেখে দিয়েছেন তা কুরআনে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখিত আছে "তারা নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করত পৃথিবীতে অসংখ্য নিদর্শন ছড়িয়ে রয়েছে আর তোমাদের (শরীরের) মাঝেও, তোমরা কি দেখতে পাওনা?" (সূরা যারিয়াত ২০ ও ২১) ।

আমরা জানি সৃষ্টির শুরুতে তাকদীরের সমস্ত বিষয় লিপিবদ্ধ করা হয়েছে, হাদীসে বলা হয়েছে 'সমস্ত বিষয় লিপিবব্ধ করা হয়ে গেছে, কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছে এবং লিখা শুকিয়ে গেছে'! কলম তুলে নেয়া ও লিখা শুকিয়ে যাওয়া অর্থ হলো যা লিখে ফেলা হয়েছে তা'ই সংগঠিত হবে। জান্নাত লিখিত হয়েছে এরকম একজন মানুষ যদি আজীবন জাহান্নামী'র মতো কাজ করে যায় তাহলে মৃত্যু'র দিন হলেও সে এমন কিছু করবে যা তাকে তাকে জান্নাতি বানিয়ে দিবে। আবার জাহান্নাম লিখিত হয়েছে এরকম কোন ব্যক্তি যদি আজীবন জান্নাতিদের মতো কাজ করতে থাকে তবে মৃত্যুর দিন হলেও সে এমন কিছু করবে যা তাকে জাহান্নামী বানিয়ে দিবে।

তাকদীরের এই বিষয়গুলি কয়েক ধাপে বাস্তবায়ন করা হয়ে থাকে। যেমন প্রথম ধাপে সৃষ্টির শুরুতেই মূল তাকদীর লিপিবদ্ধ করা হয়েছে, পরের ধাপগুলোতে তাকদীরের মূল লিপি থেকে বা‌ৎসরিকভাবে, সাপ্তাহিকভাবে এমনকি দৈনিকভাবে তা প্রেরণ করতে থাকা হয়, এরকমই একটি ধাপে আল্লাহ তায়ালা যখন মাতৃগর্ভে  একটি নতুন জীবন দান করেন তখন সেই বান্দার সম্বন্ধে সৃষ্টির শুরুতে লিখিত তাকদীরের মূল লিপি থেকে একটি অনুলিপি (কপি) তার শরীরের সাথে সংযুক্ত করে দেন। অনেকটা কোন পণ্যের মতো যেমন একটি পণ্যের গায়ে লিখে দেয়া হয় সেটাতে কি কি উপাদান কত পরিমাণ আছে, সেটার ব্যবহার বিধি এবং মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ। তেমনি মাতৃগর্ভে ফেরশতাগণ আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে বান্দা কেমন হবে, ভাল না মন্দ, জান্নাতি না জাহান্নামী এবং জীবনের ক্ষুদ্র থেকে বৃহ‌ৎ প্রতিটি ঘটনা ও অবস্থা লিখে দেন! এ বিষয়ে নীচের হাদীস দুটি দেখুন। 

আবদুল্লাহ‌ ইবনে মাসউদ (রা:) বলেন, রসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, “তোমাদের প্রত্যেকেই আপন আপন মাতৃগর্ভে চল্লিশ দিন পর্যন্ত (শুক্র হিসেবে) জমা থাকো। তারপর আরো চল্লিশ দিন রক্তপিন্ড, তারপর আরো চল্লিশ দিন গোশত পিন্ডাকারে থাকো। তারপর আল্লাহ তায়ালা একজন ফেরেশতা পাঠান এবং তাকে রিযিক, মৃত্যু, দুর্ভাগ্য ও সৌভাগ্য এ চারটি বিষয় লিখার জন্য আদেশ দেয়া হয়”। সহিহ বুখারী- ৬৫৯৪, আ: প্র: ৬১৩৪, ই: ফা: ৬১৪২

আরেকটি হাদীসে আছে আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) বলেন, রসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেন, “আল্লাহ তায়ালা‌ রেহেমে (মাতৃগর্ভে) একজন ফেরেশতা নিযুক্ত করেছেন যিনি (গর্ভাবস্থার একেক পর্যায়ে) বলেন, হে প্রতিপালক! এটি শুক্র, হে প্রতিপালক! এটি রক্তপিণ্ড। হে প্রতিপালক! এটি গোশ্‌তপিণ্ড। আল্লাহ তায়ালা যখন তার সৃষ্টি পূর্ণ করতে চান, তখন ফেরেশতা বলে, হে প্রতিপালক! এটি নর হবে, না নারী? এটি দুর্ভাগা হবে, না ভাগ্যবান? তার রিযক কী পরিমাণ হবে? তার জীবনকাল কী হবে? তখন (আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ মতো) ঐ রকমই লিখে দেয়া হয়”। সহিহ বুখারী- ৬৫৯৫, আ: প্র: ৬১৩৫, ই: ফা: ৬১৪৩
শরীরের সাথেই যে বান্দার যাবতীয় বিষয় লিখে দেয়া হয় এ বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন “তিনি তাকে একবিন্দু শুক্র থেকে সৃষ্টি করেছেন, অতপর (তার দেহে সব কিছুর) পরিমাণ নির্ধারণ করেছেন(সূরা আবাসা ১৯)। এই আয়াত সম্বন্ধে ইবনে কাসীর তাঁর তাফসীরুল কুরআন গ্রন্থে লিখেছেন “পরিমাণ নির্ধারণ” বলতে ‘জন্ম, মৃত্যু, সৌভাগ্য, দূর্ভাগ্য, রিজিক সব কিছুকেই বোঝানো হয়েছে!

কুরআনিক ও বৈজ্ঞানিক তথ্যের সাদৃশ্য

উপরোক্ত কুরআনিক ও বৈজ্ঞানিক উভয় তথ্য বিশ্লেষণ করলে নিশ্চিতভাবে প্রতীয়মান হয় যে,
  • জেনেটিক কোড (DNA) এক ধরণের লিপি, তাকদীরও একধরণের লিপি,
  • জেনেটিক কোড যেমন মাতৃগর্ভে মাতা-পিতার DNA থেকে কপি করা হয় তেমনি তাকদীরের বিষয়াদিও তাকদীরের মূল লিপি থেকে মাতৃগর্ভে কপি করে দেয়া হয়,
  • আবার যেমন জেনেটিক কোড'ই একজন মানুষের গায়ের রং, চেহারা, চোখের রং, আকার-আকৃতি, আচরণ, সুস্থতা-অসুস্থতা সহ সব ধরণের বৈশিষ্টের জন্য দায়ী তেমনি এই বৈশিষ্টগুলোর সবই কুরআন ও হাদীসে উল্লেখিত 'রিযিকমৃত্যুদুর্ভাগ্য ও সৌভাগ্যে'র অন্তর্ভূক্ত এবং এগুলোর জন্যেও তাকদীরের লিপিই দায়ী!
সম্মানিত পাঠক সাদৃশ্যগুলো ভেবে দেখুন, একই তথ্য অথচ সময়কালের ব্যবধান ১৪০০ বছর!

Share: