Sunday, June 14, 2020

নিদর্শনটি বোঝার আগে জানা দরকার পৃথিবীর কেন্দ্র কাকে বলে এবং তা কি কি উপাদান দিয়ে গঠিত।

পৃথিবীর কেন্দ্র বলতে কোন অংশকে বোঝানো হয়?

গোলাকার পৃথিবীর মাটির নীচেও অনেকগুলো স্তর আছে এই স্তরগুলোকে তাদের বস্তুধর্ম এবং রাসায়নিক ধর্ম দিয়ে সংজ্ঞায়িত করা হয়ে থাকে। পৃথিবীর বাইরের দিকে রয়েছে সিলিকেট দিয়ে তৈরি কঠিন ভূত্বক, তারপর অত্যন্ত আঠালো একটি ভূ-আচ্ছাদন বা ম্যান্টল, একটি বহিঃস্থ মজ্জা বা কোর, যেটি ম্যান্টলের চেয়ে তুলনামূলকভাবে কম আঠালো এবং সব শেষে একটি অন্তঃস্থ মজ্জাবহিঃস্থ ও অন্ত:স্থ মজ্জার অংশটুকুই পৃথিবীর কেন্দ্র যা ভূ-উপরিভাগ বা মাটি থেকে প্রায় ৫ থেকে ৬ হাজার কি:মি: গভীরে। ১৯৩৬ সালে ইঙ্গ লিম্যান অন্তঃস্থ মজ্জা আবিষ্কার করেছিলেন। সাধারণত ধারণা করা হয় যে, অন্তঃস্থ মজ্জা শুধু লোহা এবং নিকেল দ্বারা গঠিত। 

মধ্যের সাদা অংশটুকুই পৃথিবীর কেন্দ্র


পৃথিবী গঠিত হবার শুরুর দিকের ধাপগুলো সংগঠিত হয়েছে সাড়ে চার বিলিয়ন (৪৫০ কোটি) বছর আগে। পৃথিবী মৌলিকভাবে কিছু পদার্থের সাথে সম্পৃক্ত, যেসব পদার্থ উল্কাপাতের ফলে অগঠিত ভাবে পৃথিবীতে এসেছে এবং গলন প্রক্রিয়ার সময় সুগঠিত হয়েছে সেগুলো কন্ড্রাইট মিটিওরাইট বা ধাতব শিলা নামে পরিচিত। 

গলন প্রক্রিয়া চলার সময়ে অপেক্ষাকৃত ভারী বস্তুগুলো পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে ডুবে গিয়েছে এবং হালকা বস্তুগুলো ভূ-ত্বকে এসে জমা হয়েছে, এই ঘটনাটি পৃথিবীর পৃথকীকরণ প্রক্রিয়া নামে পরিচিত। ধারণা করা হয় ভূ-মজ্জার সিংহভাগ উপাদান হলো লোহা (৮০%), সাথে কিছুটা নিকেল এবং আরও কিছু হালকা মৌল। তবে অনেকে এটাও দাবী করেন যে, অন্তঃস্থ মজ্জা একটি একক লৌহ স্ফটিক মাত্র। গবেষণাগারে লোহা এবং নিকেলের একটি সংকর ধাতুর নমুনাকে ভূ-মজ্জার মতো চাপীয় অবস্থায় রেখে একটি হীরক ধারকের সাহায্যে আটকে ৪,০০০ কেলভিন তাপ দেওয়া হয়েছিল। নমুনাটিকে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছিল এক্স রে-র সাহায্যে। এই পর্যবেক্ষণের ফলে বিজ্ঞানীদের ধারণা আরও পোক্ত হয়েছে যে পৃথিবীর অন্তঃস্থ মজ্জা একটি অতিকায় স্ফটিক দিয়ে তৈরি, যেটি উত্তর থেকে দক্ষিণ দিকে ধাবমান। (তথ্য সুত্র: উইকিপিডিয়া)

উপরিউক্ত তথ্যসমূহ থেকে প্রতীয়মান হয় যে পৃথিবীর কেন্দ্রটি যেসব উপাদন দিয়ে তৈরী তার শতকরা ৮০ ভাগই লোহা (Iron)। আর এইসব লোহা উল্কাপাতের (গ্রহের ভগ্নাংশ) ফলে পৃথিবীর গঠন প্রক্রিয়া চলার সময় (প্রায় ৪৫০ কোটি বছর আগে)   পৃথিবীর কেন্দ্রে প্রবেশ করেছে (বিস্তারিত এই লিংকে)

কুরআন ও বৈজ্ঞানিক তথ্যের সাদৃশ্য

  • লোহা পৃথিবীর কেন্দ্রে অর্থা‌ৎ মধ্যভাগে অবস্থিত // অন্যদিকে কুরআনের ১১৪টি সূরার অর্ধেক বা মধ্যভাগ হচ্ছে ৫৭, আর এই ৫৭ নাম্বার সূরার নাম 'লোহা', যার ফলে কুরআন ও পৃথিবী উভয়ের মধ্যভাগেই 'লোহা' শব্দটি পাওয়া যাচ্ছে।
  • বিজ্ঞান বলে লোহা উল্কাপাতের ফলে মহাকাশ থেকে পতিত হয়ে পৃথিবীর কেন্দ্রে প্রবেশ করেছে // কুরআনও বলে লোহা আসমান থেকে পাঠানো (নাযিল করা) হয়েছে (সূরা হাদীদ ২৫)
  • বিজ্ঞান বলে পৃথিবীর সৃষ্টির প্রথম ধাপে গলন প্রক্রিয়ার সময় ভারী উল্কা পিন্ডগুলি পৃথিবীর কেন্দ্রে প্রবেশ করেছে // অন্যদিকে সূরা হাদীদেরই ৪ নং আয়াতে স্পষ্টতই বলে দেয়া হয়েছে সৃষ্টির শুরুতে আসমান থেকে পতিত কিছু পৃথিবীর কেন্দ্রের দিকে প্রবেশ করেছে
  • লোহার এটমিক নাম্বার ২৬ // অন্যদিকে লোহার আরবী حديد (হাদীদ) শব্দটির প্রতিটি অক্ষরের সংখ্যা মানের যোগফলও ২৬।

সম্মানিত পাঠক ভেবে দেখুন সৃষ্টি রহস্যের যে সব তথ্য মানুষ বিজ্ঞানের যামানায় প্রবেশের পর নিশ্চিত হলো ঠিক সেই একই তথ্য কিভাবে ১৪ শত বছর আগে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে! নিশ্চয় তিনি সত্যই বলেছেন “তোমরা কি এগুলোকে সাধারণ কথা মনে করো?(সূরা ওয়াকিয়া ৮১)

Share: